Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Image
Title
100,000 tulips bloom in Panchagarh garden to celebrate Pahela Phalgun and Valentine's Day
Details

জাকির হোসেন কবির
পঞ্চগড়, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ (বাসস) : আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ^ ভালোবাসা দিবসকে রাঙাতে জেলার তেতুলিয়া উপজেলায় প্রায় ১ লাখ গাছে দুলছে বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ। টিউলিপ ফুলের মনোমুগ্ধকর বাগানে ফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ করেছে পর্যটকদের।
দর্জিপাড়া গ্রামের প্রায় দুই একর জায়গা জুড়ে গড়ে ওঠা টিউলিপ ফুলের এই উদ্যান যেন একখন্ড নেদারল্যান্ড। এ ফুলের সৌন্দর্য় উপভোগ করতে বেড়েছে পর্যটক সমাগম। এছাড়াও আগামীতে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে এই ফুলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সমতলের চা ও কঞ্চনজঙ্গার সৌন্দর্যের পর উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় এখন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শীত প্রধান দেশের নজরকাড়া ফুল টিউলিপ। টিউলিপের সৌন্দর্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে তেতুলিয়ার দর্জিপাড়া গ্রাম। এখানে টিউলিপ ফুল চাষ হয়েছে ২০ জন উদ্যোক্তার সমন্বয়ে। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এবং ইন্টারন্যাশন্যাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (ইফদার) সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) মাধ্যমে পাইলট প্রকল্পে চাষ করা হচ্ছে বিদেশী ফুল টিউলিপ। বাহারি রঙের ১০ প্রজাতির রাজসিক টিউলিপ যেমন সৌন্দর্য বর্ধন করছে, তেমনি ছড়াচ্ছে মুগ্ধতাও। এখানে রয়েছে ইকো ট্যুরিজমের মাধ্যমে থাকা খাওয়ার হোটেল ব্যবস্থা।
ইএসডিওর পরিচালক প্রশাসন ড.সেলিমা আখতার জানান, ভৌগলিক আবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া পর্যটনে অপার সম্ভাবনা এলাকা। তেতুলিয়ায় ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে ভিনদেশি টিউলিপ ফুলের চাষ পাইলট প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছি। টিউলিপ নেদারল্যান্ডের উচ্চ মূল্যের দামি ফুল। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এসে টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। ড. সেলিমা বলেন, টিউলিপ চাষে এবার ব্যয় হয়েছে ৮০ লাখ টাকা। বাল্ব বা চারার দাম ,শেড নেট, ফেন্সিংনেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য ধরেই এই ব্যয় হয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি ১ লাখ টিউলিপ ফুলের বীজ রোপণ করা হয়। রোপনের ১৫-১৬ দিনেই চারা গজিয়ে কলি ফুটে। টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ৫০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করা হয়েছে। ফুল বাগানে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটক ও ফুলপ্রেমিকদের জন্য প্রবেশ মূল্য চালু করা হয়েছে। এতে করে ফুল বিক্রি বাদেও অতিরিক্ত টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মুগ্ধ পর্যটকেরা বলছেন, ফাগুনের আগমনে বসন্ত রাঙাচ্ছে নেদারল্যান্ডের ফুটন্ত টিউলিপ। মনে হচ্ছে, আমরা যেন কাস্মীর বা নেদারল্যান্ডে আছি। দেশের মাটিতে এরকম বাণিজ্যিক আকারে শীত প্রধান দেশের এমন দামি ফুল চাষ হবে ভাবাই যায় না।
মনোয়ারা খাতুন, সুমি আক্তার, আয়েশাসহ কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, প্রথমবারের মতো গতবছর আমরা প্রান্তিক ৮ জন নারী মিলে এ অঞ্চলে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় টিউলিপ ফুটিয়ে ছিলাম। টিউলিপ চাষ করে আমরা যেমন সফল হয়েছিলাম তেমনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছিলাম। টিউলিপ দেখতে এ অঞ্চলে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটেছিল। আশা করছি এবারও টিউলিপের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ও হাসিতে তাদের মুগ্ধ করবে। জানা গেছে, টিউলিপ ফুল চাষ করতে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় সেই উপাদান বিদ্যমান।
১০ প্রজাতের টিউলিপ হচ্ছে, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট( সাদা) ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল) ডাচ সানরাইচ (হলুদ) স্টংগোল্ড (হলুদ) জানটপিঙ্ক গোলিাপি) হোয়াইট মার্ভেল (সাদা) মিষ্টিকভ্যান ইজক গোলাপি) হ্যাপি জেনারেশন ( সাদা লাল ছায়া) এবং গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)।
টিউলিপ শীত প্রধান অঞ্চলের বসন্তকালীন ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম টিউলিপা। এটি নেদারল্যান্ডের ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য শংকর রয়েছে।
তেতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তেতুলিয়ার মাটিতে ভিনদেশি ফুল, সবজি ও ফল চাষ হচ্ছে। বিদেশি ফুল টিউলিপ চাষে এ অঞ্চলে পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করেছে। সেই সঙ্গে টিউলিপ চাষে ২০ জন নারী চাষিদের অর্থনীতি সমৃদ্ধি ঘটছে। কৃষি অফিস সব সময় পাশে আছে। আগামীতে টিউলিপ চাষ আরও বড় আকারে সম্প্রসারিত করা হলে অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক এবং পর্যটনে সমৃদ্ধি ঘটবে বলে আশা করছি।